Sheikh Hasina University (শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় )
Established: Announced
Chancellor: President Abdul Hamid
Vice-Chancellor: Dr. Rafique Ullah Khan
Location: Netrokona District , Bangladesh
সুজলা- সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আর প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরপুর নেত্রকোণা জেলাতে রয়েছে দিগন্ত জুড়ে সবুজের সমারোহ, ফসলী মাঠ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য হাওড়-বাওড়। সেখানে ফোটে অসংখ্য নাম না জানা ফুল। আর সেসব ফুলে বসে প্রজাপতি, ভ্রমর খেলা করে, যা প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর রূপে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। নেত্রকোণা জেলাকে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য্য করে দিয়েছে।
বাওড়ে প্রতিদিনই মাঝিরা নৌকা বেয়ে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। বলা চলে বাওড়ই তাদের প্রাণ। তেমনি একজন আছেন মহর মাঝি। যিনি দিন এনে দিন খাওয়াদের মধ্যে একজন। তার ছেলেমেয়ে বলতে এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। ছেলেটি লেখাপড়ায় অনেক ভাল। তারও শখ করে তার ছেলে শিক্ষিত হোক। ভাল একজন ইঞ্জিনিয়ার হোক।
ছেলের নাম সুমন। সে এখন ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। গ্রামের ছোট্ট একটি স্কুলে সে পড়ে। স্কুলটি টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। একটু বৃষ্টি হলেই টিনের ছোট ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। আবার সেখানে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার মত তেমন ভাল শিক্ষকও নেই।
এদিকে সুমন চায় তার বাবার স্বপ্ন সে পূরণ করবে। আর তারই ধারাবাহিকতায় সে একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হবে, গবেষণা করবে জেনেটিক্স সম্পর্কে। উদ্ভাবন করবে নতুন কিছু। সংসারে আলো ফিরে আসবে, ঘুচবে দারিদ্রতা।
কিন্তু সেখানে একটা ভাল স্কুল এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই, যেখানে পড়ে সে তার স্বপ্ন পুরণ করবে। বিভিন্ন সংশয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার পড়াশোনা।
আবার অন্যদিকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ বরকত আলী। তিনি পেশায় একজন কৃষক। তিনিও স্বপ্ন দেখেন নেত্রকোণায় একটা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে যেখান থেকে অনেক ভালো শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে দেশের সম্পদে পরিণত হবে। আর তারা তাদের নিজের পাশাপাশি জেলার নামকেও সমৃদ্ধ করবে। তাদের অঞ্চলে তৈরি হবে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
এরই ধারাবাহিকতায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নেত্রকোণায় তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানের একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে আছে অসংখ্য বাওড় আর সবুজের সমারোহ। উপর থেকে দেখলে মনে হবে অপার সৌন্দর্যের মাঝে নতুন সভ্যতা সৃষ্টির এক মাইলফলক, যেখানে থাকবে উন্নতমানের সকল সুযোগ সুবিধা, তৈরি হবে আগামীর সম্ভাবনা।
বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মিত হচ্ছে ৫০০ একর সুবিশাল জায়গার উপরে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৩৭.৪১ কোটি টাকা। যেটি ৩০ জানুয়ারী ২০১৮ সংসদে বিলটি পাশ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি এর একাডেমিক কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে, যা চলবে রাজুর বাজারে অবস্থিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে। মূল ক্যাম্পাস তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানেই ক্লাস চলবে।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৪ টি বিভাগ নিয়ে এর যাত্রা শুরু করবে। বিষয়গুলো হলোঃ
১. বাংলা
২. ইংরেজী
৩. কম্পিউটার সায়েন্স
৪. ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে থাকছে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য ১০ তলার পৃথক দুটি হল। যেখানে মনোরম পরিবেশে উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের জন্য ২ তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স ভবনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া ৩ তলা বিশিষ্ট সুবিশাল লাইব্রেরীতে থাকবে পাঠ্যবইসহ দেশ বিদেশের নানা ধরনের জার্নাল ও রেফারেন্স বুক, যেখানে শিক্ষার্থীরা বই সংগ্রহের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনেরও সুযোগ পাবে। থাকছে চারতলা বিশিষ্ট মেডিকেল এবং ডে-কেয়ার সেন্টার যেখানে শিক্ষার্থীরা পাবে উন্নতমানের চিকিৎসা সুবিধা, ৫ তলা বিশিষ্ট স্টাফ স্কুল এবং কলেজ ভবন, উপ- উপাচার্যের জন্য ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন।
“শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়” দেশের ৪২ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি নির্মাণে শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। যার ফলশ্রুতিতে কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং সম্ভাবনাময় নতুন একটা দ্বার উন্মুক্ত হতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মহৎ উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীরা পেতে চলেছে উন্নত শিক্ষা এবং গবেষণার নতুন সুযোগ। আর এভাবেই শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে নেত্রকোণা। পরিবর্তন হবে এ জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাগ্য। এতে আরও উপকৃত হবে সুমনের মত মেধাবী শিক্ষার্থীরা, পাবে উন্নত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তাদের বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ। পূরণ হবে ৮০ বছর বয়সী বরকত আলীর ভাগ্য।